বেলি ফুল চাষ পদ্ধতি: কিভাবে বেলিফুল চাষ করা হয়

প্রিয় ভিজিটর আজকের আলোচ্য বিষয় বেলি ফুল চাষ পদ্ধতি: কিভাবে বেলিফুল চাষ করা হয়। বর্তমানে অনেকেই সখের বসতে বেলিফুল চাষ করে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় বেলি ফুলের সঠিক চাষ পদ্ধতি না জানার কারণে বেলিফুল চাষ করতে ব্যার্থ হয়।

বেলি ফুল চাষ পদ্ধতি: কিভাবে বেলিফুল চাষ করা হয়

বাংলাদেশের অধিকাংশ উৎসব অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত ফুলের তোড়া, ফুলের মালাতে সুগন্ধীফুল হিসাবে বেলির কদর আছে। উৎসব ও অনুষ্ঠানে বেলিফুল ব্যবহৃত হয়। এটি একটি অর্থকারী ফুল। বেলি ফুল বর্তমানে একটি অর্থকারি ফুলে পরিণত হয়েছে। অনেক বেকার যুবক বেলি ফুল চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে।

বেলি ফুলের জাত

সাধারণত বেলি ফুলের তিন ধরনের জাত দেখা যায়। এগুলো হলো-

  • সিঙ্গল ধরনের ও অধিক গন্ধযুক্ত
  • মাঝারি আকার ও ডবল ধরনের
  • বৃহৎদাকার ডবল ধরনের

বেলি ফুলের বংশবিস্তার

বেলি ফুল গুটি কলম, দাবা কলম ও ডাল কলম পদ্ধতির মাধ্যমে বংশবিস্তার করা হয়।

বেলি ফুলের জমি চাষ ও সার প্রয়োগ

বেলে মাটি ও ভারী এঁটেল মাটি ব্যতীত সব ধরনের মাটিতে বেলি ফুল চাষ করা যায়। জমিতে পানি সেচ ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা তাকা ভালো। জমি ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরা ও সমান করতে হবে। জমি তৈরির সময় জৈব সার, ইউরিয়া, ফসফেট এবং এমওপি প্রয়োগ করতে হবে। প্রায় ১ মিটার অন্তর চারা রোপণ করতে হবে। চারা লাগানোর পর ইউরিয়া প্রয়োগ করে পানি সেচ দিতে হবে।

বেলি ফুল গাছের কলম বা চারা তৈরির পদ্ধতি

গ্রীস্মের শেষ হতে বর্ষার শেষ পর্যন্ত বেলি ফুলের বা চারা তৈরি করা যায়। চারা থেকে ও সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেমি হতে হবে। চারা লাগানোর জন্য গর্ত খুঁড়ে গর্তের মাটি রোদ লাগিয়ে, জৈব সার ও কাঠের ছাই গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। এরপর প্রতি গর্তে বেলির কলম বসাতে হবে। বর্ষায় বা বর্ষার শেষের দিকে কলম বসানোই ভালো। তবে সেচের ব্যবস্থা ভালো হলে বসন্তকালেও কলম তৈরি করা যায়।

টবে চারা লাগানো পদ্ধতি

জৈব পদার্থ যুক্ত দোআঁশ মাটিতে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার পরিমাণমতো মিশিয়ে টবে বেলি ফুলের চাষ করা যায়। টব ঘরের বারান্দা বা ঘরের ছাদে রেখে দেওয়া যায়।

বেলি ফুল গাছের পরির্যা

  • সেচ দেওয়া: বেলি ফুলের চাষে জমিতে সবসময় রস থাকা দরকার। গ্রীষ্মকালে ১০-১২ দিন পর পর, শীতকালে ১৫-২০ দিন পর পর ও বর্ষাকালে বৃষ্টি সময়মতো না হলে জমির অবস্থা বুঝে ২-১ টি সেচ দেওয়া দরকার।
  • আগাছ দমন: জমি বা টব থেকে নিয়মিত আগাছ পরিষ্কার করতে হবে। খড় কেটে কুচি করে জমিতে বিছিয়ে রাখলে সেচের প্রয়োজন কম হয় এবং আগাছাও বেশি জন্মাতে পারে না।
  • অঙ্গ ছাঁটাইকরণ: প্রতিবছরই বেলি ফুলের গাছের ডাল-পাতা ছাঁটাই করা দরকার। শীতের মাঝামাঝি সময় ডাল ছাঁটাই করতে হবে। মাটির উপরের স্তর থেকে ৩০ সেমি উপরে বেলি ফুলের গাছ  ছাঁটাই করতে হবে। অঙ্গ ছাঁটাইয়ের কয়েকদিন পর জমিতে বা টবে সার প্রয়োগ করতে হবে।

রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি

বেলি ফুল গাছের ক্ষতিকারক কীট তেমন দেখা যায় না। তবে মাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। এদের আক্রমণে পাতায় সাদা আস্তরণ পড়ে, আক্রান্ত পাতাগুলো কুঁকড়ে যায় ও গোল হয়ে পাকিয়ে যায়। গন্ধক গুঁড়া বা গন্ধক ঘটিত মাকড়নাশক যেমন-সালট্যাফ, কেলথেন ইত্যাদি পাতায় ছিটিয়ে মাকড় দমন করা যায়।

বেলি ফুলের পাতায় হলদে বর্ণের ছিটে ছিটে দাগযুক্ত এক প্রকার ছত্রাক রোগ দেখা যায়। ট্রেসেল-2 প্রয়োগ করে এ রোগ দমন করা যায়।

বেলি ফূলের ফলন

ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গাছে ফুল ফোটে। ফলন প্রতি বছর বাড়ে। লতানো বেলিতে ফলন আরও বেশি হয়। সাধারণত ৫-৬ বছর পর গাছ কেটে ফেলে নতুন চারা লাগানো হয়।

লেখকের শেষ কথা

আজকের বিষয় ছিল বেলি ফুল চাষ পদ্ধতি: কিভাবে বেলিফুল চাষ করা হয়? উপরোক্ত আলোচার মাধ্যমে বেলি ফুল চাষ পদ্ধতি সম্পূর্ণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি ব্লগটি আপনাদের উপকারে আসবে। এমন ধরনের সকল ব্লগ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ


Next Post Previous Post