বেগুন গাছের চাষ পদ্ধতি- কীভাবে বেগুন চাষ করতে হয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জেনে নিন
বেগুন অতি পরিচিত একটি বারোমাসি সবজি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ইউরোপীয় দেশসহ প্রভৃতি দেশে এর চাষ করা হয়। তবে বেগুন গাছের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে বেগুন গাছ চাষ করে ভালো ফলন করা সম্ভব নয়। আজ আমরা জানবো বেগুন গাছের চাষ পদ্ধতি।
বেগুন একটি বারোমাসি সবজি। তাই এর চাহিদাও অনেক। বেগুনের রেগাবালায় বেশি থাকায় অনেক চাষিগণ লস খেয়ে বেগুন বেগুন চাষ করা বা দিয়ে দিয়েছে। তবে যদি সঠিক ভাবে চাষ করা যায় বেগুন থেকে লাভ করা সম্ভব।
বেগুন এর জাত
ইসলামপুরী, শিংনাথ, নয়নতারা, নয়নকাজল, মুক্তকেশী, খটখটিয়া, তারাপুরী, উত্তরা উল্লেখযোগ্য। বারমাসী কালো ও সাদা বর্ণের জাত (ডিম বেগুন) রয়েছে। বিদেশি জাতের মধ্যে ব্ল্যাক বিউটি, ফ্লোরিডা বিউটি, উল্লেখযোগ্য।
বেগুন গাছের বীজ বপন ও চারা উৎপাদন পদ্ধতি
বেগুন চাষের জন্য চারা উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি হতে আশ্বিন মাস এবং বর্ষকালীন বেগুন চাষের জন্য চৈত্র মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। বালি, কমপোস্ট ও মাটি সমপরিমাণে মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পর চারা তুলে দ্বিতীয় বীজতলায় রোপণ করতে হয়।
বেগুন গাছের জমি নির্বাচন পদ্ধতি
জমি নির্বাচনের জন্য দোআঁশ বেলে দোআঁশ মাটি বেগুন চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে পানি অপসারণের ভালো ব্যবস্থা থাকলে এঁটেল ও দোআঁশ মাটিতেও বেগুনের চাষ ভালো হয়।
বেগুন গাছের জমি তৈরি
জমি তৈরির জন্য ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে তৈরি করতে হবে। ভালো ফসল পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করা প্রয়োজন।
বেগুন চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার
বেগুন চাষের জন্য যে সকল সার প্রয়োজন হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সার নিচে আলোচনা করা হলো এখানে এক শতক জমির জন্য যে পরিমাণ সার প্রয়োজন তার নমুনা দেওয়া হলো-
- গোবর শতক প্রতি ৪০ কেজি
- ইউরিয়া শতক প্রতি ১ কেজি
- টিএসপি শতক প্রতি ৫০০ গ্রাম
- এমওপি শতক প্রতি ৫০০ গ্রাম
বেগুন গাছের সার প্রয়োগের নিয়মাবলি
(ক) ইউরিয়া ছাড়া সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। তবে গোবর জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করাই উত্তম।
(খ) ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১0-১২ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
বেগুন গাছের চারা রোপণ পদ্ধতি
এক মাস বয়সে সবল চারা কাঠির সাহায্যে তুলে নিতে হবে। চারা গাছের শিকড়ের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর পর ৭৫ সেমি দূরত্বের সারিতে ৬০ সেমি দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হবে।
বেগুন গাছের পরিচর্যা
মাটিতে রসের অভাব হলে বা মাটি শুকিয়ে গেলে ১০-১৫ দিন পর পানি সেচ দিতে হবে। সেচের পর নিড়ানি দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। আগাছ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
বেগুনের বালাই ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশে কমপক্ষে প্রায় ১৬ প্রজাতির পোকা এবং একটি প্রজাতির মাকড় বেগুন ফসলের ক্ষতি করে। এর মধ্যে বেগুনের প্রধান শত্রু ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। এই পোকা বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্র করে। আক্রান্ত ডগা ও ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এছাড়াও ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন নামক কীটনাশকের যে কোনো ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।
নিম্নলিখিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের বালাই দমন করা যায়-
- কলম চারা ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের উইল্টরোগ দমন করা যায়।
- ফেরোমন ও মিষ্টিকুমড়ার ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুন জাতীয় ফসলের মাছি পোকা দমন করা যায়।
- মুরগির পচনকৃত বিষ্ঠা ও সরিষার খৈল ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজি যেমন-বেগুন, টমেটো, শশা, বাঁধাকপি ফসরের মাটি বহিত রোগ দমন করা যায়।
- সঠিক সময়ে আগাছ দমন ও মালচিং করলে ফলন বহুগণে বৃদ্ধি পায়।
- পোকা প্রতিরোধী জাত ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের ডগা ও ফলের মাজরা পোকা দমন করা যায়। যেমন- বারি বেগুন-১ (উত্তরা), বারিবেগুন-৫ (নয়নতারা), বারিবেগুন-৬, বারিবেগুন-৭ ইত্যাদি পোকা প্রতিরোধী জাত।
- পোকার আক্রমণমুক্ত চারা ব্যবহার করতে হবে।
- সুষম সার ব্যবহার
- শস্য পর্যায় অনুসরণ করে
বেগুন ফলন
চারা রোপণের ৩০-৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে। বেগুনের ফল বীজ শক্ত হওয়ার আগেই সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণ প্রতি শতকে বা ৪০ বর্গমিটার জমিতে ১৪০ কেজি বেগুন উৎপন্ন হয়। উত্তরা বেগুন ২৫০ কেজি পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে।
বিপণন
বেগুন ফসল সংগ্রহের পর ঠান্ডা ও খোলা জায়গায় কয়েক দিন সংরক্ষণ করা যায়। তবে বস্তায় বেশিক্ষণ রাখা ঠিক হবে না। এতে বেগুন তার স্বাভাবিক রং হারাতে পারে এবং পচে যেতে পারে।
লার্নি ফাইবিডির শেখ কথা
প্রিয় ভিজিটর আশা করি আপনার এই কনটেন্টটি ভালো লেগেছে। বিষয়ক আরোও তথ্যে জানতে কৃষি ও প্রযুক্তি এখানে ক্লিক করুন। আরও নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।