সঠিক নিয়মে কুরবানির পশু জবাই করার উপায়- কুরবানি পশু নির্বাচন করার উপায়
আজরে আলোচনার বিষয় সঠিক নিয়মে কুরবানির পশু জবাই করার উপায়। কুরবানি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই ইবাতদটি আল্লাহ তাআলার নামে পশু জবেহ করার মাধ্যমে আদায়
করা হয়। অনেক মানুষ আছেন কুরবানির পশু জবেহ করার সঠিক নিয়ম ও প্রয়োজনীয় দুয়া জানেন না। তাই চলুন জেনে নি কীভাবে সঠিক নিয়মে কুরবানির পশু জবাই করার উপায় সমূহ।
কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম
কোরবানি জবাই করার কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। বিভিন্ন হাদিসে বলা হয়েছে নিজ হাতে নিজের কুরবানী করার কথা। তাছাড়া রাসুলুলালাহ (সঃ) নিজের কুরবানি নিজেই জবাই করেছেন। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ কুরবানির পশু জবাই করা ও নিয়ম জানেন না। যার কারণে তারা নিজ হাতে নিজের পশু কুরবানী করেন না। কিন্তু কুরবানীর পশু নিজের হাতেই জবাই করা উচিত। নিচের পয়েন্ট আকারে কোরবানির পশু জবাই করা তুলে ধরা হলো-
- পশু জবাইয়ের পূর্বে দানাদার খাবার না খাওয়া। কারণ দানাদার খাবার খাওয়ানো পরে জবাই কলে সেই খাবার তার পেটেই থেকে যায়।
- পশু জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ বলে ছুরি চালানো শুরু করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবাই করা যাবেনা।
- পশু জবাই করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। যেমন, পশুর খাদ্যনালী এবং দুই পাশে থাকা দুটি নালী ভালোভাবে কেটেছে কিনা তা দেখে জবাই করতে হবে। এই সব নালি কাটা হলেই পশু জবাই হয়ে যাবে।
- পশু জবাই করার আগে জবায়ের ছুরি অবশ্যই অনেক ধারালো এবং ব্যবহার যোগ্য ছুরি হতে হবে। যাতে করে জবাই করার সময় পশু কোনভাবে কষ্ট না পায়।
- জবাই করার আগে পশু সুন্দরভাবে সুয়ে রাখতে হবে। জবাই করার সময় যাতে করে বেশি নড়াচড়া দিয়ে উঠে যেতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
- একটি পশুর সামনে অন্য পশু জবাই করা ঠিক নয়। তাছাড়া পশুর সামনে ছুড়ি ছুড়ি ধার দেওয়া বা রক্ত মাখা ঝুরি নিয়ে পশুর সামনে ঘোরাঘুরি না করা।
- পশু জবাইয়ের পরে পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা। পশুর রক্ত, চামড়া গবর ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে মাটি চাপা দিয়ে ঢেকে দেওয়া।
কোরবানির পশু জবাই করার সময় মুখে (উচ্চ স্বরে) নিয়ত করা জরুরি নয়। অবশ্য মনে মনে নিয়ত করতে হবে যে, ‘আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি আদায় করছি। তবে মুখে দোয়া পড়া উত্তম।
কোরবানির পশু কে ক্বিবলার দিকে শোয়ানোর পর যে দোয়া পাঠ করতে হবে-
উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
তারপর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে কুরবানির পশু জবাই করা।
কোরবানির পশু জবাই করে এ দোয়া পড়া-
উচ্চারণ :আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিমা আলাইহিমাস সালাতা ওয়াস সালাম।
পশু নির্বাচন করার উপায়
ইসলামিকভাবে কোরবানির পশুর যে শ্রেণি ও বয়স নির্ধারণ করে পশু সেই শ্রেণি বা বয়সের হতে হবে। ইসলামি আইন মতে ৬ ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি করা হয়। যা হলো- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এ পশুগুলোকে সুনির্দিষ্ট কিছু দোষ বা খুঁত থেকে মুক্ত থাকতে হবে। কোরবানির জন্য পশুগুলো অবশ্যই সুস্থ, সুন্দর ও হৃষ্টপুষ্ট হতে হবে।
কুরবানি পশুর বয়স
- উটের জন্য ৫ বছর হতে হবে।
- গরু-মহিষ এর জন্য বয়স ২ বছর হতে হবে।
- ছাগল-ভেড়া-দুম্বার জন্য বয়স ১ বছর হতে হবে।
উত্তম কোরবানির জন্য যা করণীয়
ছাগল- ভেড়া বা দুম্বার ক্ষেত্রে ১ বছর মেনে চলতে হবে। যদি কোনো ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা গত কুরবানির দিনে জন্ম নেয় তবে সেই ছাগল , ভেড়া বা দুম্বা এ বছর ঈদের দিন কুরবানি না করা বরং ঈদের পরের দিন কুরবানি করা উত্তম।
ব্যতিক্রম কিছু তথ্য
যদি কোনো কোরবানির পশুর বয়স ১, ২ ও ৫ বছর না হয়। বা উপরের আলোচনা অনুযায়ী কুরবানির পশুর বয়স না হয়। কিন্তু সেই পশু যদি দেখতে অনেক টা নাদুস-নুদুস, হৃষ্ট-পুষ্ট হয়। অর্থাৎ কুরবানির জন্য উপযুক্ত হয়েছে এমন টা মনে হয় তবে সেই কুরবানি করা যাবে।
শেষ কথা
আজকের বিষয় ছিলো সঠিক নিয়মে কুরবানির পশু জবাই করার উপায়- কুরবানি পশু নির্বাচন করার উপায়। উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে সকল তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। তবে বিস্তারিত তথ্য জানতে আপনাকে অবশ্যই কুরবানি নিয়ে হাদসি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া উচিত। তাছাড়া কোনো জ্ঞানী আলেমের কাছে থেকেও এইসব তথ্য নিতে পারেন। কষ্ট করে যেহেতু কুরবানি দিচ্ছেন সঠিক নিয়ম অবলম্বন করেই কুরবানি দিবেন যাতে করে আপনার কুরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হয়। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।